বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ - MB TV

বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ মে ৬, ২০২৩ | ৪:৫০ 168 ভিউ
ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ মে ৬, ২০২৩ | ৪:৫০ 168 ভিউ
Link Copied!

মনির হোসেন মিঠু :

রাজধানীসহ ১৩টি এলাকায় ভূগর্ভস্থ ফাটল।
বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ।
গত শুক্রবার ছিলো ছুটির দিন। ভোর সকাল, অনেকেই ছুটির দিন বলে অনেকটা প্রশান্তিতে বিছানায় ঘুমিয়ে আছেন।আর যারা সবে মাত্র ঘুম থেকে উঠে বিছানায় আড়মোড়া ছিলেন তারা ভূমিকম্পের বিষয়টি অনুধাবন করতে পরেছেন বেশ ভালো মতোই। এসময় অনেকেই আতংকিত হয়ে বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন।বিশেষ করে রাজধানীর হাইরাইজ বিল্ডিং-এর বাসিন্দারা আতংকিত ছিলেন সবচেয়ে বেশী।
রাজধানীর এতো কাছে ভূমিকম্পের উতপ্তি স্থল হওয়ায় আতংকের মাত্রা বেড়ে যায় রাজধানীবাসীর মনে।

গত পরশু শুক্রবার ভোরে ৪.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিলো রাজধানী ঢাকা, উৎপত্তিস্থল কাছে তাই আতঙ্কের
ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঝুঁকির মাঝেই উৎকন্ঠায় আছে দেশবাসী।
বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে আছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ।
এছাড়া সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগও রয়েছে বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে।

বিজ্ঞাপন

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইন্ডিয়া এবং বার্মা টেকটোনিক প্লেটে যে শক্তি সঞ্চয় হয়েছে তার ৬০ থেকে ৮০ ভাগ যে কোন ভূমিকম্পের মধ্য দিয়ে বের হয়ে এলেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে পারে এই অঞ্চল। ইন্ডিয়া এবং বার্মা প্লেট এবং বাংলাদেশের ভূ-তাত্ত্বিক অবস্থান বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানবে। রাজধানী ঢাকার আশপাশে বড় মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে ঢাকা মহানগরীর।
ছোট ভূমিকম্পগুলো বড় ভূমিকম্পের আলামত।
গত শুক্রবার ভোরে ৪.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠে রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকা। মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে মাত্র ৪২ কিলোমিটার দূরে দোহারের উত্তর-পশ্চিমে। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে। ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল রাজধানীর এত কাছে ও ভূ-পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে হওয়ায় এ নিয়ে চিন্তার কথা জানিয়েছেন ভূ-তত্ত্ববিদরা। আবার বড় ভূমিকম্পের শত বছরের মধ্যে আরেকটি বড় ভূমিকম্প হয়। সেদিক থেকেও কয়েক বছরের মধ্যে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা বেশি।
ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান এবং বার্মা তিনটি গতিশীল প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। বাংলাদেশের দুই দিকের ভূ-গঠনে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি জমা হয়েছে। একটি উত্তরপূর্ব কোনে সিলেটের ডাউকি ফল্টে, আরেকটা পূর্বে চিটাগাং ত্রিপুরা বেল্টে পাহাড়ি অঞ্চলে।
বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যাওয়া ইন্ডিয়া-বার্মা টেকটোনিক প্লেটে গেলো শত বছরেও বড় কোন ভূমিকম্প হয়নি। তাই এই প্লেটে জমেছে দীর্ঘদিনের সঞ্চিত শক্তি। এটি যে কোন মুহূর্ত আট থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের মধ্য দিয়ে হাজির হবার শঙ্কা আছে। আর এমন মাত্রার ভূমিকম্প হলে, সেই ধাক্কা সামলাতে পারবে না ঢাকা। ধ্বসে পড়বে কয়েক হাজার ভবন, মৃত্যু হবে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ লাখ মানুষের। ভূমিকম্প বিশ্লেষকরা এমনটাই মনে করছেন।

বিশিষ্ট ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ঢাকায় যদি সাত মাত্রার ভূমিকম্পও আঘাত হানে, আমরাদের যে প্রস্তুতি, ভবনের স্ট্রাকচার, ঘনবসতি তাতে অনেক বড় বিপর্যয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। ভূতাত্ত্বিক কাঠামো অনুযায়ী বাংলাদেশে তিনটি টেকটনিক প্লেটের সংযোগ স্থলে অবস্থিত। উত্তরে তিব্বত প্লেট, পূর্বে বার্মা সাব-প্লেট এবং পশ্চিমে ইন্ডিয়া প্লেট। এগুলোর বিস্তৃতি সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার। এই জোনে বড় বড় ভূমিকম্প হয়েছে। আবার শতবর্ষে বড় ভূমিকম্প ফিরে আসে। দেশে গেলো কয়েক বছরে ৩ থেকে ৫ মাত্রার ছোট ছোট বেশ কটি ভূমিকম্প হয়েছে। কিন্তু গেলো শত বছরেও বড় ধরণের কোন ভূমিকম্প হয়নি। সে কারণেই শঙ্কাটাও বেশি।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, নদীপথ নিয়ন্ত্রণ করে যে ফাটলরেখা, তা দিয়ে যখন ভূমিকম্প হয়, সেই ভূমিকম্প বড় হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। তার এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকা শহরের ৩০৫ বর্গকিলোমিটার এলাকার ৩৫ শতাংশ মূলত লাল মাটির ওপরে গড়ে ওঠা। এই মাটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য উপযুক্ত। বাকি ৬৫ শতাংশ এলাকা মূলত নদীর তীরবর্তী কাদামাটি ও বালুমাটির এলাকা। মোহাম্মদপুর, উত্তরা ও পূর্বাচল নতুন শহর এ ধরনের মাটির। বেশির ভাগ বেসরকারি আবাসন প্রকল্প মূলত নরম মাটিতে গড়ে উঠেছে। ঢাকায় ৫ থেকে ৬ মাত্রার ভূকম্পন হলে নরম মাটির ভবনগুলো ভেঙে যাওয়া বা হেলে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলায় পর্যাপ্ত উন্মুক্ত জায়গা দরকার। ঢাকার অবকাঠামো যেমন দুর্বল তেমনি মানুষের জনসচেতনতা কম। যদি একটা বড় মাত্রার ভূমিকম্প হয় তাহলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বেশি হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন শিক্ষকের গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশের ১৩টি এলাকা ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। ভূগর্ভস্থ ফাটল বা চ্যুতি থাকার কারণে ঐ কম্পন হতে পারে। সবচেয়ে তীব্র ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা ও সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকা। সব এলাকাই ঢাকা থেকে কমপক্ষে ১০০ কিলোমিটার দূরে। কিন্তু সেখানে ৭ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হলে তা ঢাকায় বড় ধরনের বিপর্যয় তৈরি করতে পারে।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা শহরের ৭৬ শতাংশ রাস্তা সরু হওয়ায় ভূমিকম্প হলে উদ্ধার তৎপরতা চালানো কঠিন হয়ে যাবে। এছাড়া ৬০ শতাংশ ভবন মূল নকশা পরিবর্তন করে গড়ে ওঠায় বড় ধরনের ভূমিকম্পের সময় এ অপরিকল্পিত ভবনগুলো সঙ্গে সঙ্গেই ধসে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইনে বিস্ফোরণ ঘটে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। ভূমিকম্প অসহনশীল ভবনগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সংস্কার বা ধ্বংস করার পরিকল্পনা করা হলেও তার কোনো বাস্তবায়ন নেই।

 

বিষয়ঃ