ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে সাংবাদিক ইমরান ইসলামের কিছু কথা ।। - MB TV

ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে সাংবাদিক ইমরান ইসলামের কিছু কথা ।।

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২১ | ১০:২৫ 148 ভিউ
ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২১ | ১০:২৫ 148 ভিউ
Link Copied!

 

বাংলাদেশে ভাষার মাস হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব পায় ফেব্রুয়ারি মাস। এই মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাংলা দিন পঞ্জিকার ফাগুন মাসের আরম্ভ।ঋতুচক্রের শেষ ঋতু বসন্তেরও শুরু ফেব্রুয়ারিতেই।এই মাসে আরও যোগ হয়েছে ভালোবাসা দিবস নামের একটি দিন। বিশ্ব সংস্কৃতির অনুসরণে, অনুকরণে।২১ ফেব্রুয়ারির মাত্র এক সপ্তাহ আগে ১৪ তারিখে এই দিবসটি খুব ঘটা করে আমাদের দেশে পালন করা হয়।এই দিনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডেও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।কারণ এ দিনে প্রিয় মানুষকে ফুল উপহার দিয়ে ভালোলাগা, ভালোবাসা ও পছন্দের গোপন বা প্রকাশ্য অনুভূতি জানান দেওয়া হয় ফুল দিয়ে।ফলে অন্যসব দিনের তুলনায় এই দিনে ফুল বেচাকেনা হয় প্রায় তিনগুণ।প্রিয়জনকে ফুল দিয়ে ভালোবাসার কথা জানানোই সর্বোত্তম উপায়।

তবে ইদানীং সমাজে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কাপড় দেওয়ার রীতিনীতি।নারী-পুরুষের পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে জুতা স্যান্ডেল, অলঙ্কার কেনার সংস্কৃতি। বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার বিস্তৃত হয়েছে ভালোবাসা দিবস কেন্দ্র করে গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত।বসন্ত বরণ উপলক্ষেও প্রচুর ফুল, পোশাক এবং আনুষঙ্গিক বেচাকেনা চলে।আর যাই হোক বাংলাদেশের অর্থনীতির এক বিরাট অংশ জুড়ে আছে এ দিবসগুলোর আনুষ্ঠানিকতা।ভালোবাসা দিবস আমাদের সংস্কৃতিতে আমদানিকৃত।কিন্তু বসন্ত এবং ভাষা শহিদ বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস একান্তই আমাদের নিজস্ব, আমাদের সাংস্কৃতিক আমাদের ঐতিহ্য।ভালোবাসা দিবসও এখন আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিতে জায়গা করে নিয়েছে। ভালোবাসা দিবসের প্রাথমিক ইতিহাস যতটুকু জানা যায়, তা ছিল মূলত কৃষিব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত।

বিজ্ঞাপন

মনে করা হয়, প্রাচীন রোমকদের কোনও উৎসব আচার হতে ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তি।এ উৎসব মূলত ফনাস নামের এক প্রকৃতি দেবতা-কেন্দ্রিক ছিল।তবে প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল,শস্যক্ষেত্র ও পালিত পশু ইত্যাদির উর্বরতা বৃদ্ধি কামনা।পরবর্তীকালে ভ্যালেন্টাইন নামের দুজন রোমক শহিদের স্মারক বার্ষিক ভোজনোৎসবের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ব্যাপকভাবে পালিত হতে থাকে।এ দুজন রোমক তৃতীয় শতাব্দীতে জীবিত ছিলেন বলে বলা হলেও একবারে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা সম্ভব হয়নি।আগে দিনটি পালনে বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চলা হত।তবে বর্তমান সমাজে আর সেই নিয়ম-কানুন তেমন কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয় না।বরং বিষয়টি সর্বজনীন মর্যাদা পেয়েছে।

ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখে পছন্দের পাত্রপাত্রীর নিকট উপহার সামগ্রী বা শুভেচ্ছাপত্র পাঠিয়ে দিনটি পালন করা হত।উপহারে ব্যবহৃত কার্ডটিই সাধারণত ভ্যালেন্টাইন নামে অভিহিত।কার্ডটি হৃদয় সংকেত বা ভালোবাসার প্রতীক চিত্র দিয়ে চিত্রিত বা অংকিত হত। অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য পছন্দের পাত্রপাত্রীর নিকট প্রেরিত বার্তা বা উপহার ছদ্ম নামে পাঠানোর নিয়ম ছিল। প্রকৃত পরিচয় গোপন রাখা হলেও এখন আর তা অনুসরণ করা হয় না।বিজ্ঞানের প্রসার ও চর্চার ফলে মানব সমাজে এসেছে অনেক পরিবর্তন।

আমাদের সমাজে ভালোবাসা দিবসের আমদানি দু-দশক আগে। ভাষা আন্দোলনের মাসে আমাদের যুব সমাজের স্বজাতির ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে ব্যাপক অধ্যয়ন, চর্চা ও অনুশীলনের কথা।তেমন পরিস্থিতিতে তারা সেই পথে উৎসাহিত না হয়ে।পড়ে রয়েছি আমদানি করা বিদেশি সংস্কৃতির উপর।এখন আর শুধু যুব সম্প্রদায়, প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যেই দিনটি পালন সীমাবদ্ধ নয়। নারীপুরুষ, বাবা-মা, ভাইবোন, আত্মীয় বন্ধু সবাই এ দিনটি পালন করে।তারপরও মানতে হবে এত চেষ্টা-অপচেষ্টার পরেও ভাষা শহিদের দিন বা মাসের মর্যাদা কোনও অংশেই কমেনি।

বিজ্ঞাপন

একুশের শিক্ষা সেই যে বলা হয়- ‘একুশ মানে মাথা নত না করা’ সেই সত্য সেই শক্তি আবারও প্রমাণিত হয়। কোনও অপচেষ্টাই বাঙালির আত্মচেতনা দমিয়ে রাখতে পারবে না। সমস্ত অপশক্তির বিরুদ্ধে একুশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শেখায়।বাঙালির মাথা উঁচুই থাকবে যতদিন বাঙালি একুশের আদর্শ থেকে বিচ্যুত না হবে।ভালোবাসা দিবসের প্রধান উপাদান ফুল, একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা শহিদ দিবসেরও তাই। ফুল ভালোবাসার চিরন্তন প্রতীক। সর্বকালে সর্বসমাজে ফুল ভালোবাসতেই শেখায়।

বিষয়ঃ