চট্টগ্রামের ইতালী প্রবাসীকে নারীসহ ছবি তুলে জিম্মি, গ্রেফতার ৩ - MB TV

চট্টগ্রামের ইতালী প্রবাসীকে নারীসহ ছবি তুলে জিম্মি, গ্রেফতার ৩

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ মে ১, ২০২১ | ১১:৫৯ 83 ভিউ
ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ মে ১, ২০২১ | ১১:৫৯ 83 ভিউ
Link Copied!

চট্টগ্রামর সংবাদদাতা : 

চট্টগ্রামের হালিশহর বি ব্লক এলাকায় আবু ইউসুফ নামের এক প্রবাসীকে ঘরে আটকে রেখে নারীসহ ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবার ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর পুলিশের কাছে কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেয় ভুক্তভোগী আবু ইউসুফের ছেলে সজিব। অভিযোগের ভিত্তিতে হালিশহর থানায় মামলা রুজু করা হলেও সাংবাদিক পরিচয় দেয়া আরেফিন সোহাগ নামের একজনকে আসামির তালিকা থেকে কৌশলে বাদ দেয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী আবু ইউসুফ।

 

বিজ্ঞাপন

জানা যায় ২১ এপ্রিল দুপুরে হালিশহর বি ব্লকের ২০ লেইনে ট্রেড স্কুলের পাশে একটি বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী ছেলে আরাফাত হোসেন সজিব জানায়, ২১ এপ্রিল বুধবার দুপুরে তার পিতা ইতালী প্রবাসী আবু ইউসুফ বি ব্লকের ২০ নং লেইনের শেষ মাথায় নিজের বাড়িতে ভাড়া তুলতে যায়। এসময় স্থানীয় দুই যুবক এক নারীকে নিয়ে এসে জোর করে আবু ইউসুফকে ধরে রুমে নিয়ে গিয়ে ছবি তুলে। ছবি উঠিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবার ভয় দেখিয়ে চার লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে ফোন করে পরিবারের সদস্যদের কাছে। পরে পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করার চেষ্ট করে। এসময় প্রবাসী আবু ইউসুফ ও তার ছেলে সজিবকে মারধর করে স্থানীয় দূর্বৃত্তরা।

 

আমাদের হাতে আসা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় মারধরের ঘটনায় স্থানীয় আরো কিছু যুবক এসে যোগ দেয়৷ সজিব জানায়, এ ঘটনায় জড়িতদের একজন নুরুল ইসলাম মিরন নিজেকে পুলিশ সদস্য হিসেবে পরিচয় দেয়। এছাড়া একই চক্রের অন্যজন আরেফিন সোহাগ নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেয়। পরে, পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে প্রবাসী ইউসুফ ও তার ছেলেকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় হালিশহর থানায় ১০ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীর ছেলে আরাফাত হোসেন সজিব। প্রতিবেদকের কাছে মামলা থেকে কৌশলে সোহাগ আরেফিন নামের কথিত সাংবাদিককে বাদ দেবার অভিযোগ করেন সজিব।

বিজ্ঞাপন

 

তিনি বলেন, ‘ আমরা থানায় লিখিত অভিযোগে মিরন, সুমন, মিলটনসহ অন্যান্যদের সাথে সোহাগ আরেফিনের জড়িত থাকার কথা জানাই। কিন্তু কৌশলে তাকে মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। ঘটনার পরদিন আরেফিন আমাদের বাসায় এসে হুমকি প্রদান করলে আমার বাবা সোহাগ আরেফিনের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেন। জিডি নং ৮৪৭। ‘ থানা সুত্রে জানা যায় প্রবাসী আবু ইউসুফকে আটকে রেখে নারীসহ ছবি তুলে মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় স্থানীয় সন্ত্রাসী মহিউদ্দিন সুমন (৩২), মিল্টন (৩৫), ছোটন (৫০), সোনিয়া (৩৫), মোহাম্মদ হৃদয় (২২),মোঃ পারভেজ (৩৩), মোহাম্মদ সোহেল (২৪), মোহাম্মদ মামুন (৩৫), মনাইয়া মনা (৩৩), নুরুল ইসলাম মিরন (৩২)এই দশজনকে মামলার আসামী করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে মামলায়। তবে ঘটনাস্থলে স্বশরীরে উপস্থিত থাকা অন্যজন সাংবাদিক পরিচয় দেবার কারনে তাকে আসামী করা হয় নি। হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, ঘটনার পরদিন ২২ এপ্রিল এ ঘটনায় দন্ডবিধির ১৪৩/৪৪৮/৩২৩/৩২৪ /৩৮৬/৩০৭/১৭০/৫০৬ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। এ পর্যন্ত ঘটনার সাথে জড়িত নারী সোনিয়াসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২৩ এপ্রিল সোহাগ আরেফিন নামের অন্য এক কথিত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী আবু ইউসুফ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। জিডিটি মামলার সাথে যুক্ত করা হয়েছে। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। আমাদের হাতে আসা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় ঘটনা সংগঠিত হওয়া বাড়িটিতে দুপুর ১.৪৪ মিনিটে এক নারীসহ প্রবেশ করছে দুজন যুবক । বাইরে বেশ কিছু যুবককে পাহাড়া দিতে দেখা যায় ফুটেজে। ঘন্টা খানেক পরে ভুক্তভোগীর স্বজনদের ঘটনাস্থলে উপস্থিত হবার দৃশ্যও দেখা যায় ফুটেজে।

 

এসময় আসামীর তালিকা থেকে বাদ দেয়া কথিত সাংবাদিক সোহাগ আরেফিনকে একটি মোটর সাইকেলযোগে আসামী মিরনকে নিয়ে এলাকা ত্যাগ করতেও দেখা যায়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই সাহেদ জানান, এ ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে সোহেল ও সোনিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোহেলের বিরুদ্ধে মান্না হত্যা মামলাসহ ৪/৫ টি মামলা রয়েছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় গ্রেফতার হওয়া মোহাম্মদ সোহেল চলতি মাসে জামিনে আসে। অন্য আসামি মিরন আন্তঃ জেলা ডাকাত দলের সদস্য, তার বিরুদ্ধেও রয়েছে বেশ কয়েকটি মামলা। এছাড়া সাংবাদিক পরিচয় দেয়া সোহাগ আরেফিন রিজেন্ট গ্রুপের মালিক আলোচিত সাহেদের ব্যাক্তিগত কর্মকর্তা। সংঘবদ্ধ এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে হালিশহরে এমন অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে জানান স্থানীয়রা। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (পশ্চিম) পলাশ ক্লান্তি নাথ জানান, এ ঘটনায় জড়িতদের একজন পুলিশ ও একজন সাংবাদিক বলে পরিচয় দিয়েছে বলে জেনেছি। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে। যেহেতু ভুক্তভোগী নিজেই একজন সাংবাদিক পরিচয়ধারীর নাম উল্লেখ করে থানায় জিডি করেছেন। তাকেও তদন্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। অপরাধী যেই হউক গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বিষয়ঃ