পবিত্র শবে মেরাজে বিশ্বনবীকে বিশেষ সম্মাননা
ইসলামিক ডেস্ক :
ইসরা অর্থ রাতে ভ্রমণ করা। মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত রাসুল (সা.)-এর বিশেষ ভ্রমণ ইসরা হিসেবে পরিচিত।
আর মেরাজ অর্থ, আরোহণের মাধ্যম বা ঊর্ধ্ব ভ্রমণ। ভূপৃষ্ঠ থেকে নভোমণ্ডলে ভ্রমণ করা। বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে সাত আসমানের ওপর সিদরাতুল মুনতাহায় গমন ও সেখান থেকে আবার বায়তুল মুকাদ্দাসে ফিরে আসা মেরাজ হিসেবে পরিচিত।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘পবিত্র ওই সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে মসজিদে হারম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছেন। যা চতুর্পাশ আমি বরকতময় করেছি, তাঁকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। ’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ১)
আল্লাহ আরো বলেন, ‘নিশ্চয়ই তিনি তাকে (জিবরাইল) আরো একবার প্রত্যক্ষ করেছেন। সীমান্ত নির্দেশকারী সিদরা বৃক্ষের কাছে। যেখানে আছে বাসোদ্যান। যখন সিদরা বৃক্ষটি যতটুকু আবৃত থাকার ততটুকু আবৃত করা হয়। তখন তাঁর দৃষ্টিভ্রম হয়নি ও সীমা অতিক্রমও করেনি। নিঃসন্দেহে তিনি তাঁর রবের শ্রেষ্ঠ নিদর্শনগুলো প্রত্যক্ষ করেছেন। ’ (সুরা নাজম, আয়াত : ১৩-১৮)
পটভূমি : রাসুল (সা.)-এর প্রিয়তম চাচা আবু তালেব মৃত্যুবরণ করেন। এর কিছুদিন পরই রাসুল (সা.)-এর প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজা (রা.) ইন্তেকাল করেন। ইসলামের জন্য তাঁদের সহযোগিতা অনস্বীকার্য। তা ছাড়া ইসলামের দিকে দাওয়াত দিতে তায়েফ গমন করেন। সেখানের অধিবাসীদের দাওয়াত দিলে তারা সাড়া দেয়নি। উপরন্তু তারা রাসুল (সা.)-কে পাথর নিক্ষেপ করে কষ্ট দেয়। রাসুলের পেছনে শিশু-কিশোরদের লেলিয়ে দেয়। ফলে তিনি ভারাক্রান্ত মনে বেরিয়ে আসেন। মহানবী (সা.)-এর এই মনঃকষ্ট দূর করতে আল্লাহ তাঁর প্রিয় বন্ধুকে একান্ত সাক্ষাতে ডেকে নেন।
বায়তুল মুকাদ্দাস গমন : আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘বোরাক নিয়ে আসা হলো—বোরাক হলো, গাধার চেয়ে দীর্ঘ ও খচ্চরের চেয়ে ছোট একটি জন্তু দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত যার পদক্ষেপ। আমি তাতে আরোহণ করে বায়তুল মুকাদ্দাস আসি। অতঃপর বাহনটি একটি আংটার সঙ্গে বেঁধে রাখি, নবী-রাসুলরা এর সঙ্গে বাহন বেঁধে নিতেন। মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করি। মসজিদ থেকে বের হলে জিবরাইল (আ.) আমার কাছে দুটি পাত্র আনেন। একটি মদের, অপরটি দুধের পাত্র। আনি দুধের পাত্র গ্রহণ করি। জিবরাইল (আ.) বলল, আপনি ফিতরাত তথা স্বভাবজাত বিষয়টি গ্রহণ করেছেন।
নবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ : জিবরাইল (আ.) মহানবী (সা.)-কে নিয়ে সপ্তাকাশ অতিক্রমের সময় তাঁর সঙ্গে কয়েক নবীর সাক্ষাৎ হয়। দ্বিতীয় আসমানে ঈসা বিন মারয়াম ও ইয়াহইয়া বিন জাকারিয়া (আ.)-এর সঙ্গে, তৃতীয় আসমানে ইউসুফ (আ.)-এর সঙ্গে, চতুর্থ আসমানে ইদরিস (আ.)-এর সঙ্গে, পঞ্চম আসমানে হারুন (আ.)-এর সঙ্গে, ষষ্ঠ আসমানে ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গে এবং ফেরার সময় মুসা (আ.)-এর সঙ্গে দেখা হয়।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যেভাবে ফরজ হলো : ‘অতঃপর তিনি আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে যান। হাতির কানের মতো এর পাতাগুলো। এর ফলগুলো কাঠের মতো। আল্লাহর নির্দেশে তা আবৃত হলে পরিবর্তন হয়ে পড়ে। আল্লাহর কোনো সৃষ্টির এর সৌন্দর্যের বর্ণনা দেওয়ার সামর্থ্য নেই। অতঃপর আল্লাহ আমাকে ওহি প্রদান করেন। অতঃপর প্রত্যেক দিন ও রাতে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেন।
আমি মুসা (আ.)-এর কাছে আসি। তিনি বলেন, আপনার রব আপনার উম্মতের ওপর কী ফরজ করেছেন? আমি বললাম, পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ। তিনি বলেন, আপনি রবের কাছে গিয়ে আরো সহজ করার আবেদন করুন। আপনার উম্মত তা পালন করতে পারবে না। আর আমি বনি ইসরাইলকে পরীক্ষা করেছি এবং তাদের সম্পর্কে জানি। অতঃপর আমি রবের কাছে গিয়ে বললাম, হে আমার রব, আমার উম্মতের জন্য সহজ করুন। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কমালেন। আমি মুসা (আ.)-এর কাছে গিয়ে বললাম, তিনি পাঁচ ওয়াক্ত কমিয়েছেন। মুসা (আ.) বললেন, আপনার উম্মত তা পালন করতে পারবে না। আপনার রবের কাছে যান এবং সহজ করার আবেদন করুন। এভাবে আমি মহান রব ও মুসা (আ.)-এর মধ্যে আসা-যাওয়া করতে থাকলাম।
শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুহাম্মদ, প্রতিদিন ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে। প্রত্যেক নামাজের বিনিময়ে ১০ ওয়াক্ত নামাজের সওয়াব হবে। এভাবে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজের সওয়াব হবে। আর যে কোনো ভালো কাজের ইচ্ছা করবে এবং তা করল না তার জন্য একটি পুণ্য লেখা হবে। আর তা করলে দশ সওয়াব লেখা হবে। আর যে কোনো মন্দ কাজের ইচ্ছা করে এবং তা করল না, তার ক্ষেত্রে কিছুই লেখা হয় না। আর তা করলে একটি গুনাহ লেখা হয়। ’
অতঃপর আমি অবতরণ করে মুসা (আ.)-এর কাছে আসি। এবারও তাঁকে জানালে তিনি বললেন, আপনার রবের কাছে গিয়ে সহজের আবেদন করুন। আমি বললাম, আমার রবের কাছে অনেকবার গিয়েছি, এখন আবার যেতে লজ্জাবোধ হচ্ছে। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১৬২)
সূত্র: কালের কণ্ঠ