ঈদের দিনের সুন্নাতসমূহ
১. দুই ঈদের রাতে গুরুত্বসহ ইবাদত করা। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
مَنْ قَامَ لَيْلَتَيِ الْعِيدَيْنِ مُحْتَسِبًا لِلَّهِ , لَمْ يَمُتْ قَلْبُهُ يَوْمَ تَمُوتُ الْقُلُوبُ
যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার রাতে জাগরিত থেকে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকবে, তাহলে তার দিল কেয়ামতের দিন মরবে না। (ইবন মাজাহ ১৭৮২) (কেয়ামতের আতঙ্কের কারণে অন্যান্য লোকের অন্তর ঘাবড়ে গিয়ে মৃতপ্রায় হয়ে যাবে। কিন্তু দুই ঈদের রাতে ইবাদতকারীর অন্তর তখন ঠিক থাকবে, ঘাবড়াবে না।)
২. মিসওয়াক করা। ইবনুল মুসাইয়াব রহ. বলেন, السواك في يوم العيد سنة ঈদের দিন মিসওয়াক করা সুন্নাত। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক ৩/৩০৮)
৩.গোসল করা। নাফি রহ. বলেন ,
أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ يَغْتَسِلُ يَوْمَ الْفِطْرِ قَبْلَ أَنْ يَغْدُوَ إِلَى الْمُصَلَّى
ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত যে, তিনি ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদিস: ৬০৯)
ইমাম নববী রহ. বলেন,
اتفاق العلماء على استحباب الاغتسال لصلاة العيد. والمعنى الذي يستحب بسببه الاغتسال للجمعة وغيرها من الاجتماعات العامة موجود في العيد بل لعله في العيد أبرز
ঈদের নামাযের জন্য গোসল করা মুস্তাহাব মর্মে আলেমদের মতৈক্য উল্লেখ করেছেন। যে কারণে জুমার নামায ও অন্যান্য সাধারণ সম্মিলনের জন্য গোসল করা মুস্তাহাব ঠিক একই কারণ ঈদের ক্ষেত্রেও পাওয়া যায়। বরং ঈদের ক্ষেত্রে সে কারণটি আরও বেশি স্পষ্ট। (https://islamqa.info)
৪. শরীয়তসম্মত সাজসজ্জা করা। জাবের রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজি ﷺ -এর এমন একটি জুব্বা ছিল যেটা তিনি দুই ঈদের সময় ও জুমার দিন পরতেন। (সহিহ ইবনে খুযাইমা ১৭৬৫)
৫. সামর্থ অনুপাতে উত্তম পোশাক পরিধান করা।ইমাম বাইহাকী সহিহ সনদে বর্ণনা করেন যে, ইবনে উমর রাযি. ঈদের জন্য তার সবচেয়ে সুন্দর পোশাকটি পরতেন। ( বায়হাকী : ১৯০১)
৬. সুগন্ধি ব্যবহার করা।(মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-৭৫৬০)
৭. ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাবার আগে মিষ্টিজাতীয় যেমন খেজুর ইত্যাদি খাওয়া। তবে ঈদুল আযহাতে কিছু না খেয়ে ঈদের নামাযের পর নিজের কুরবানীর গোশত আহার করা উত্তম।বুরাইদা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী করীম ﷺ ঈদুল ফিতরের দিনে না খেয়ে বের হতেন না, আর ঈদুল আজহার দিনে ঈদের নামাজের পূর্বে খেতেন না। সালাত থেকে ফিরে এসে কুরবানীর গোশত খেতেন। (আহমদ : ১৪২২) আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ঈদুল ফিতরের দিন কয়েকটি খেজুর না খেয়ে বের হতেন না, আর খেজুর খেতেন বে-জোড় সংখ্যায়। (বুখারী : ৯০০)
৮. সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِنَّ أَوَّلَ مَا نَبْدَأُ بِهِ فِي يَوْمِنَا هَذَا أَنْ نُصَلِّيَ، ثُمَّ نَرْجِعَ فَنَنْحَرَ، مَنْ فَعَلَهُ فَقَدْ أَصَابَ سُنَّتَنَا
আমাদের এ দিনে আমরা সর্ব প্রথম যে কাজটি করবো তা হল (ঈদের) নামাজ আদায় করবো। এরপর ফিরে এসে আমরা কুরবানী করবো। যে ব্যাক্তি এভাবে তা আদায় করল সে আমাদের নীতি অনুসরণ করল। (বুখারী ৫১৪৭)
৯.ঈদুল ফিতরে ঈদগাতে যাওয়ার পূর্বে সদকায়ে ফিতর আদায় করা। ইবনু উমর রাযি. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ লোকদেরকে ঈদের নামাজের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই সাদকাতুল ফিত্র আদায় করার নির্দেশ দেন। (বুখারী ১৪২১)
১০.পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া। আলী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সুন্নত হল ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া। (তিরমিযী ১৮৭ )
১১. ঈদের নামায ঈদগাহে আদায় করা, বিনা অপরাগতায় মসজিদে আদায় না করা। (বুখারী ৯৫৬, আবু দাউদ ১১৫৮)
১২.যে রাস্তায় ঈদগাতে যাবে, সম্ভব হলে ফিরার সময় অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরা। (বুখারী ৯৮৬)
১৩. ঈদের দিনে তাকবীর দেওয়া। এটি ঈদের দিনের মহান সুন্নত।
ওয়ালিদ বিন মুসলিম বলেন, আমি আওযায়ি ও মালেক বিন আনাসকে দুই ঈদের দিন উচ্চস্বরে তাকবির দেওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি। তাঁরা উভয়ে বলেছেন: হ্যাঁ। আব্দুল্লাহ্ বিন উমর রাযি. ঈদুল ফিতরের দিন ইমাম আসার আগ পর্যন্ত উচ্চস্বরে তাকবির দিতেন।
আবু আব্দুর রহমান আস্-সুলামি থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, তাঁরা ঈদুল আযহার তাকবিরের চেয়ে ঈদুল ফিতরের ব্যাপারে বেশি কঠোর ছিলেন। ওকী বলেন, বুঝাতে চাচ্ছেন: তাকবিরের ব্যাপারে।( ইরওয়াউল গালিল ৩/১২২)
ঘর থেকে বের হওয়া থেকে শুরু করে ঈদগাহে আসা পর্যন্ত ও ইমাম আসা পর্যন্ত তাকবীর দেওয়ার বিষয়টি সালাফদের মাঝে মশহুর ছিল। একদল গ্রন্থাকার এ বিষয়টি বর্ণনা করেছেন। যেমন- ইবনে আবু শাইবা, আব্দুর রাজ্জাক, ফিরইয়াবি ‘আহকামুল ঈদাইন’ গ্রন্থে একদল সালাফ থেকে বর্ণনা করেছেন। এ বর্ণনাগুলোর মধ্যে রয়েছে যে, নাফে বিন জুবাইর নিজে তাকবীর দিতেন এবং লোকদের তাকবীর না দেওয়া দেখে বিস্মিত হয়ে বলতেন: আপনারা কি তাকবীর দিবেন না?
ইবনে শিহাব আয-যুহরী বলেন, লোকেরা বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় থেকে ইমাম আসার আগ পর্যন্ত তাকবীর দিতেন।
ঈদুল ফিতরের তাকবীর দেওয়ার সময় হচ্ছে- ঈদের রাত থেকে শুরু করে ঈদের নামাযের ইমাম হাযির হওয়া পর্যন্ত।
তাকবীর দেওয়ার পদ্ধতি:
মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবাতে সহিহ সনদে ইবনে মাসউদ রাযি. থেকে উদ্ধৃত হয়েছে যে, তিনি তাশরিকের দিনগুলোতে এভাবে তাকবির দিতেন,
الله أكبر الله أكبر لا إله إلا الله والله أكبر الله أكبر ولله الحمد
(উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ)(অনুবাদ: আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। আল্লাহ্ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। আল্লাহ্ মহান, আল্লাহ্ মহান। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য।)
১৪. শুভেচ্ছা বিনিময় করা।
ঈদের শিষ্টাচারের মধ্যে রয়েছে পরস্পরের মাঝে উত্তম পদ্ধতিতে শুভেচ্ছা বিনিময় করা। সে শুভেচ্ছার ভাষা যে ধরণেরই হোক না কেন। যেমন কেউ কেউ বলেন, تقبل الله منا ومنكم (তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম) (অনুবাদ: আল্লাহ্ আমাদের ও আপনাদের নেক আমলগুলো কবুল করে নিন)। কিংবা عيد مبارك (ঈদ মোবারক) কিংবা এ ধরণের অন্য যে কোন বৈধ ভাষায়।
জুবাইর বিন নুফাইর থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ঈদের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীবর্গ যখন একে অপরের সাথে সাক্ষাত করতেন তখন বলতেন: تُقُبِّل منا ومنك (তুকুব্বিলা মিন্না ও মিনকা) (অনুবাদ: আমাদের আমল ও আপনার আমল কবুল হোক)। (আল-ফাতহ ২/৪৪৬)